জানতে হবে যে

পানিফলের গুণাগুণ , উপকারিতা ও অপকারিতা

                     
                      পানিফলের গুণাগুণ

জলাশয়ে চাষ হয় বলে পানিফল নামে খ্যাত। পানি ফলের আরেকটি নাম শিঙ্গাড়া। দেখতে সিঙ্গারার মতো-তাই জামালপুরে পানিফল সিঙ্গারা নামে বেশি পরিচিত। এ ফলে কোনো বীজ নেই। লতাপাতার মতো সারা বছরই দেখতে পাওয়া যায়।

নিচু এলাকায় মৌসুমি ফসল হিসেবে পানি ফল চাষ করা হয়। মৌসুমে প্রতি জমি হতে ২-৩ বার পানি ফল আহরণ করা হয়। এটি কাঁচা এবং সিদ্ধ উভয় প্রকারে খাওয়া যায়।

পানসে ও সস্তা হলেও পানিফলের রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। এটি বলকারক। এটি যকৃতের প্রদাহনাশক ও উদরাময় রোগ নিরাময়ক। এটি যৌন শক্তিবর্ধক ও ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যায় উপকারী।

পিত্তজনিত রোগনাশক ও রক্ত দাস্তবন্ধকারক। পানিফল প্রস্রাববর্ধক, শোথনাশক ও রুচিবর্ধক। দীর্ঘকাল থেকেই এটি ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

পানিফলের উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে এবং পরিপক্ব হয়ে আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফল বিক্রি শুরু হয়। চলে অনেক দিন। প্রতি সপ্তাহে ফল তোলা যায়।

     পানিফলের ৩৯টি উপকারিতা

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক এর পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে। পানিফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশ অর্থাৎ খোলা ছাড়িয়ে মোট শাঁসের পরিমাণ ১০০ গ্রাম হলে তাতে পাওয়া যায় –
১) খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৫ কিলোক্যালোরি
২) এতে জলের পরিমাণ ৮৪.৯ গ্রাম
৩) খনিজ পদার্থ – ০.৯ গ্রাম
৪) খাদ্য আঁশ – ১.৬ গ্রাম
৫) আমিষ – ২.৫ গ্রাম
৬) শর্করা – ১১.৭ গ্রাম
৭) ক্যালসিয়াম – ১০ মিলিগ্রাম
৮) আয়রন – ০.৮ মিলিগ্রাম
৯) ভিটামিন বি১ – ০.১৮ মিলিগ্রাম
১০) ভিটামিন বি২ – ০.০৫ গ্রাম
১১) ভিটামিন সি – ১৫ মিলিগ্রাম
১২) এক একটি পানি ফলে চর্বির পরিমাণ – ০.৯ গ্রাম
১৩) এ ছাড়াও আছে পটাশিয়াম, জিঙ্ক,  ভিটামিন-ই। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। 
এতে গেল পুষ্টিগুণ। এ বার দেখে নেব এর ওষধি গুণ বা খাদ্য গুণ বা উপকারিতা কী কী?
১৪) প্রথম কথাই হল এত পুষ্টিগুণ থাকার দরুন শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে পানিফল।
১৫) পানিফল পেটের রোগ নিরাময় করে।
১৬) ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে।
১৭) দুর্বল শরীরকে বল দেয়।
১৮) হাত-পা ফোলা ঠিক করে।
১৯) এটি যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে।
২০) এটি যৌন শক্তিবর্ধক একটি ফল।
২১) ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারী।
২২) এমনকী এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণও।
২৩) শরীর ঠাণ্ডা করতে পানিফলের জুড়ি নেই।
২৪) শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
২৫) বমিভাব, হজমের সমস্যা দূর করতে পানিফলের কোনো তুলনা হয় না।
২৬) অনিদ্রা দূর করতে কাজে দেয়।
২৭) ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করে পানিফল।
২৮) ব্রঙ্কাইটিস, অ্যানিমিয়া কমাতে পারে।
২৯) পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি দূর হয়।
৩০) পিত্তজনিত রোগ নাশ করে।
৩১) রক্ত আমাশা বন্ধ করে।
৩২) প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে।
৩৩) শরীরের সংক্রমণ দূর করে।
৩৪) অরুচি কমায়। খাবারে রুচি আনে।  
৩৫) তল পেটের ব্যথা দূর করে।
৩৬) বিছে বা বিষাক্ত কোনো পোকা কামড়ালে সেই জায়গায় পানিফল বেটে লাগালে দ্রুত ব্যথা কমে ও ক্ষত উপশম হয়।
৩৭) শুধু তাই নয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও সতেজ এবং তারুণ্য ধরে রাখতেও পানিফল অনবদ্য।
৩৮) পানিফলের ওষধি গুণে চুল ভালো থাকে।
৩৯) শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ করে।
পানিফলের শুধু খাদ্যগুণ নয়, রয়েছে ঔষধি গুণও! যেমন –

-পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ কমে যায়।

-উদরাময় ও তলপেটের ব্যথায় পানিফল খুবই উপকারী।

-বিছা বা পোকা কামড় দিলে আহত স্থানে পানিফল পিষে লাগালে ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ